শাহিদ মোস্তফা শাহিদ, ঈদগাঁও
কক্সবাজার সদরের ইসলামপুরে বনবিভাগের কোটি টাকার জায়গা দখল করে নির্মিত অবৈধ স্থাপনা ও সীমানা প্রাচীর গুড়িয়ে দিয়েছে প্রশাসন।

বুধবার (১২ জুলাই) বিকাল ৩টা হতে সন্ধ্যা সাড়ে ৫টা পর্যন্ত কক্সবাজার সদরের সহকারী কমিশনার (ভূমি) পঙ্কজ বড়ুয়া ও সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) বেলায়েত হোসেনের নেতৃত্বে ডুলাফকির মাজার সংলগ্ন ফকিরাবাজার এলাকায় অভিযান চালানো হয়।

এ সময় দখলবাজ ও প্রভাবশালীরা প্রশাসনের অভিযানে বাঁধা দিতে বেশ কয়েকবার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। সব বাঁধা উপক্ষো করে অভিযান চালিয়ে যায় প্রশাসন। উচ্ছেদ অভিযানকালে দখলবাজরাও উপস্থিত ছিল।

স্থানীয়রা জানায়, বন্দোবস্তি নেওয়ার অযুহাতে ইসলামপুরের এক প্রভাবশালী নেতা ফুলছড়ি রেঞ্জের নাপিতখালী বনবিটের অধীনস্থ প্রায় দেড় একর রিজার্ভ জায়গা দখল করে চারদিকে টিনের সীমানা প্রাচীর দিয়ে আসছিল। অবৈধভাবে গড়ে তুলে ঘরবাড়ী। এছাড়া আশপাশের আরো অন্তত ৫০ একর সরকারী বনভূমি দখলে নিয়ে দখলবাজরা। সেখানে ইতোমধ্যে দোকানপাট নির্মাণ করে ভাড়া দিচ্ছে। যা স্থানীয় প্রশাসন দেখেও না দেখার ভান করে আছে বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ।

অভিযোগ রয়েছে, চিহ্নিত দখলবাজের সহায়তাকারী হিসেবে স্থানীয় কয়েকজন জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক নেতা জড়িত রয়েছে। তারা আশপাশের বনভূমি একে একে দখল করে তাতে স্থাপনা নির্মাণ অব্যাহত রাখে। এমনকি এলাকার ভূমিহীন লোকদের জমিতেও প্রভাবশালীদের নজর পড়ে।

তবে, বনরক্ষায় নিয়োজিতদের অবহেলা ও দখলবাজদের সঙ্গে আঁতাতের কারণে সরকারী বন সম্পদ ধংস হচ্ছে এবং বনের জমি বেপরোয়াভাবে দখল হয়ে যাচ্ছে- এমন অভিযোগ দীর্ঘ দিনের।

অবশেষে স্থানীয়দের অভিযোগের প্রেক্ষিতে অবৈধ স্থাপনা গুড়িয়ে দেওয়া হয়। এসময় এলাকার শত শত নারী-পুরুষ উচ্ছেদ অভিযানটি প্রত্যক্ষ করেন। অভিযানকে সাধুবাদ জানায় এলাকাবাসী। এরকম অভিযান অব্যাহত রাখার আহবান জানায় তারা।

অভিযানকারীদের সহযোগিতা করেন ফুলছড়ি রেঞ্জ কর্মকর্তা আবদুর রাজ্জাক, বনবিট কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান, ভোমরিয়াঘোনা রেঞ্জ কর্মকর্তা মাজহারুল ইসলাম, মেহেরঘোনা রেঞ্জ কর্মকর্তা আতা এলাহী, ঈদগড় রেঞ্জ কর্মকর্তা এমদাদুল হক, ঈদগাঁও ইউনিয়ন ভূমি অফিসের তহশীলদার সাইফুল ইসলাম, ঈদগাঁও পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের এসআই দেবাশীষ সরকারসহ বিপুল সংখ্যক পুলিশ এসময় উপস্থিত ছিলেন।

এদিকে অভিযোগ ওঠেছে, কিছু জায়গায় উচ্ছেদ অভিযান চালানো হলেও অধিকাংশ বনের জমি দখল করে সেখানে নির্মিত অধিকাংশ অবৈধ দোকানপাট অক্ষত রয়ে গেছে। এ কারণে প্রশাসনের অভিযান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে এলাকাবাসী। এতে স্থানীয় বিট কর্মকর্তারা মোটা অংক নিয়ে এসব অবৈধ স্থাপনা নির্মাণে সহযোগিতা করেছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে অভিযানে নেতৃত্বদানকারী জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট (এসিল্যান্ড) পঙ্কজ বড়ুয়া সিবিএনকে জানান, অভিযান শুরু মাত্র। সরকারী জমিতে কোন অবৈধ স্থাপনা থাকতে দেয়া হবেনা।শীঘ্রীই আবারো অভিযান চালানো হবে। এ সময় দখলবাজদের ব্যাপারেও ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান এসিল্যান্ড পঙ্কজ বড়ুয়া।

এদিকে দখলবাজরা জমিগুলো অপর জনের কাছ থেকে বন্দোবস্তি অবস্থায় ক্রয় করেছেন বলে জানান। তবে উচ্ছেদ অভিযানের পর কর্মকর্তারা চলে গেলে পুনরায় সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করতে দেখা গেছে বলে প্রত্যক্ষদর্শী অনেকেই জানিয়েছে।